ক্রিকেট মাঠে একসাথে থাকেন ১৩ জন ক্রিকেটার। ফিল্ডিং দলের ১১ জনের পাশাপাশি ২২ গজের দু’পাশ থেকে দু’জন ব্যাটসম্যান থাকেন। এদের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নের জন্য দু’জন মানুষ সার্বক্ষণিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন। আবার প্যাভিলিয়নে টিভির পর্দায় আরেকজন থাকেন যিনি সিদ্ধান্ত গ্রহণে মাঠে দু’জনকে সহায়তা প্রদান করেন এদেরকে ডাকা হয় আম্পায়ার নামে। আম্পায়ারের কাজ হচ্ছে ক্রিকেটের নিয়মানুসারে খেলা চালানো। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আউট কিংবা রানের সংকেত দিয়ে স্কোরারদের সাহায্য করা। আম্পায়ারের দায়িত্ব একই সাথে জটিল এবং মজার। যে কেউই চাইলে ক্রিকেট আম্পায়ার হতে পারে। কিন্তু এর পেছনে দরকার একাগ্রতা এবং ক্রিকেট খেলা সম্পর্কে গভীর জ্ঞান।
How to Become a Cricket Umpire এর ধাপসমূহ
খেলোয়াড়েরা সবটুকু মনোযোগ কেড়ে নিলেও ক্রিকেট মাঠে সর্বোচ্চ কর্তৃত্বের অধিকারী আম্পায়াররাই। কেউ আম্পায়ার হতে চাইলে তাঁকে একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। প্রক্রিয়াটি নিম্নরুপঃ
১। কোনো ক্রিকেট সংস্থায় যোগ দেয়া
আপনার নিকটস্থ ক্রিকেট সংস্থা খুঁজে বের করুন। গুগলে সার্চ করলেই আপনি এর ফলাফল পেয়ে পাবেন। সার্চ বক্সে গিয়ে “cricket association near me” লিখে সার্চ দিলেই সংস্থার নাম পেয়ে যাবে। যদি আপনি খেলোয়াড় হতে থাকেন তবে আপনার ক্লাব অথবা লীগ কোন সংস্থার অধীনে সেটি খুঁজে বের করুন। আম্পায়ার হিসেবে ক্রিকেট ম্যাচ পরিচালনা করতে চাইলে আপনাকে সেই সংস্থার শর্তাবলি পূরণ করতে হবে। যেমন আপনি দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার কোনো লীগের আম্পায়ার হতে চাইলে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট সংস্থার শর্তাবলি পূরণ করতে হবে।
২। ক্রিকেট সংস্থার আম্পায়ার হবার কোর্সে যোগ দিন
আপনার জন্য প্রযোজ্য ক্রিকেট সংস্থার ওয়েবসাইটে গিয়ে কোর্স সম্পর্কে খোঁজ নিন। সেখানে দেখুন তারা কী ধরণের কোর্সের সুযোগ দিচ্ছে। অনেক ক্রিকেট সংস্থা চায় তাদের নিবন্ধিত আম্পায়ারেরা যাতে আম্পায়ারিং এর উপর থাকা সবগুলো কোর্স সম্পন্ন করে। তাই ওয়েবসাইট থেকে ভালোমতন লক্ষ্য করুন আপনি সবগুলো কোর্স সম্পন্ন করেছেন কিনা। অনলাইনের পাশাপাশি সপ্তাহে অন্তত একবার সশরীরে মাঠে থাকার পরিকল্পনা করুন। সেখানে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের বিষয়াবলি সহজে শিখতে পারবেন।
৩। সংস্থার আম্পায়ারিং পরীক্ষায় পাশ করুন
আপনার সংশ্লিষ্ট সংস্থার সকল কোর্স সম্পন্ন করুন। নিয়মিতভাবে সেগুলো চর্চার উপরে রাখুন। এলাকার খেলায় তার প্রয়োগ করার চেষ্টা করুন। তাত্ত্বিক বিষয়ের চেয়ে ব্যবহারিক প্রয়োগের উপর বেশি গুরুত্ব দিন। কোর্স সম্পন্ন করার পর প্রতিটি ক্রিকেট সংস্থা সাধারণত একটি পরীক্ষার আয়োজন করে থাকে। আপনি যদি সেই পরীক্ষায় পাস করেন, তবেই আপনি সেই সংস্থার আম্পায়ার সদস্যপদের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই সদস্যপদের জোরে আপনি সংস্থার আওতাভুক্ত এলাকাভিত্তিক লীগ আর ক্লাবের খেলায় আম্পায়ারিং করতে পারবেন। এটি হবে আপনার আম্পায়ারিং জীবনের প্রাথমিক ধাপ।
৪। খেলার নিয়ম সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখুন
একজন আম্পায়ার হিসেবে আপনার দায়িত্ব হলো খেলাকে সঠিকভাবে পরিচালনা করে। আর সেজন্য ক্রিকেটের আইন ও নিয়ম সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ জ্ঞান রাখা আপনার কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। সব ধরণের নিয়ম সম্পর্কে একেবারে পরিষ্কার ধারণা নিয়ে রাখুন। অনভিপ্রেত পরিস্থিতিতে আপনার উপস্থিত বুদ্ধি ও জ্ঞানের গভীরতা সঠিক পথ দেখিয়ে নেবে। যদি আপনি ইতোমধ্যেই ক্রিকেট খেলে থাকেন, তবুও নিজের স্মরণশক্তিকে ঝালাই করে নিন। অনলাইনে আম্পায়ারিং সম্পর্কে হাজার তথ্যের উৎস রয়েছে। স্থানীয় লাইব্রেরিতে ক্রিকেট সম্পর্কে বই নিয়ে এসে পুরোটা পড়ে ফেলুন। অনলাইনে নিজের জ্ঞান যাচাই করার জন্য ক্রিকেট কুইজে অংশ নিন। এর মাধ্যমে নিজের কোন জায়গায় উন্নতি করতে হবে সেই বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পাবেন।
৫। এলাকার খেলার মাঠে যান এবং আম্পায়ারদেরকে পর্যবেক্ষণ করুন
নিয়মিতভাবে কাছাকাছি এলাকায় ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে যান। সেখানে আম্পায়ারদের শরীরিভংগি পর্যবেক্ষণ করুন। মাঠে গিয়ে খেলা দেখার সুযোগ না হলে অনলাইনে পুরনো খেলার ভিডিও দেখুন। সেখানে আম্পায়ারদের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করুন। তারা কীভাবে মাঠে দাঁড়ায়, কীভাবে হাতের ভংগির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত জানায় এবং কোচ ও খেলোয়াড়দের সাথে কীভাবে ভাষার আদান-প্রদান করে সেগুলো পর্যবেক্ষণ করুন। এগুলো আপনার নিজের কাজে সাহায্য করবে। খেলার মাঠে আম্পায়ারদেরকে দেখলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন কীভাবে আপনি নিজে আম্পায়ারিং করার সময়ে মাঠে চলাফেরা করবেন।
৬। বিভিন্ন ধরণের আম্পায়ারিং সংকেত সম্পর্কে শিখুন
আম্পায়ারের সংকেতের উপর ক্রিকেটের গতি-প্রকৃতি নির্ভর করে। তর্জনী উঁচিয়ে ধরা আম্পায়ার ক্রিকেটে একজন ব্যাটারের জন্য ভয়ংকরতম দৃশ্য। হাতের ইশারার মাধ্যমে একজন আম্পায়ার স্কোরার, খেলোয়াড়, কোচ ও দর্শকদেরকে তাঁর সিদ্ধান্ত জানান। তাই একজন সফল আম্পায়ার হবার পূর্বশর্ত হলো সব ধরণের ইশারা বা সিগন্যাল সম্পর্কে জানা। প্রতিটি ইশারা মুখস্থ করে ফেলুন এবং বাসায় বারবার সেটির চর্চা করুন। যেমনঃ নো বলের সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য আপনাকে ভূমির সাথে অনুভূমিকভাবে আপনার ডান হাত প্রলম্বিত করে ইশারা দিতে হবে। আপনার সর্বশেষ সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নেয়ার জন্য বুকের উপরে আপনাকে হাত দু’টোকে আড়াআড়িভাবে রাখতে হবে এবং আপনার হাতকে কাঁধে বরাবর রাখতে হবে।
৭। আপনার ক্রিকেট সংস্থার নিয়ম মেনে চলুন
অনেক ক্রিকেট সংস্থা তাদের প্লেয়ারের সুবিধার্থে অনেক নিয়মে পরিবর্তন আনে। তাই আপনি যাতে মাঠে ভুল সিদ্ধান্ত না দেন সেজন্য সংস্থার নিয়ম সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখুন। সাধারণত এই ধরণের নিয়ম পরিবর্তন করা হলে সেটি আপনার প্রশিক্ষণের সময়েই বলে দেবার কথা। তবুও কোনো ধরণের সন্দেহের উদ্রেক হলে অন্য কাউকে জিজ্ঞেস করুন। অনেক ম্যাচ কিংবা বয়সের ভিত্তিতে আম্পায়ারিংয়ে পরিবর্তন আনা হয়। যেমন উঁচু পর্যায়ের ম্যাচের চেয়ে জুনিয়র পর্যায়ে একজন আম্পায়ারকে নিয়ম মানায় কিছুটা শিথিলতা বজায় রাখার নির্দেশ দেয়া হয়।
৮। মাঠে আপনার সঙ্গীর সাথে কথা বলুন
ক্রিকেট খেলার মতন আম্পায়ারিংও একটি দলীয় কাজ। দু’জন আম্পায়ার মিলে অনেক সময়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হয়। আপনার সঙ্গী কী করছে সেই বিষয়ে খেয়াল রাখুন। তাঁর সাথে সবসময় কথা বলুন। এমন হতেই পারে আপনি কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপেক্ষা করে গেছেন অথবা এই ঘটনা তাঁর সাথে ঘটেছে – এসব ক্ষেত্রে দু’জন এক জায়গায় এসে কথা বলুন। ম্যাচের আগে কথা বলে নিন যাতে নিয়মের ব্যাপারে আপনারা একই মনোভাব নিয়ে মাঠে নামেন। দু’জন আম্পায়ারের মধ্যে এমন রসায়ন একটি ক্রিকেট ম্যাচকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য খুবই জরুরি।
৯। বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব বজায় রাখুন
আপনার প্রতিটি সিদ্ধান্তে নিরপেক্ষতা বজায় রাখুন। একজন আম্পায়ার হিসেবে ক্রিকেট মাঠে আপনি নিজে আচরণের মানদণ্ড নির্ধারণ করে দেবেন। আপনার আচরণ দেখে একজন খেলোয়াড় বা কোচ শিখবে ক্রিকেট মাঠে আচরণ কেমন হওয়া উচিত। কোচ কিংবা খেলোয়াড়দের উপর রাগ প্রদর্শন করবেন না। বরং, হাসুন এবং সবাইকে বুঝান যে মাঠে আপনি নিজের দায়িত্বকে বেশ উপভোগ করছেন।
How to Become a Cricket Umpire এই ধাপগুলো মেনে যে কেউ ক্রিকেটে আম্পায়ার হতে পারবে।
উপসংহার
ক্রিকেটে আম্পায়ারদের উপর ম্যাচ পরিচালনার গুরুদায়িত্ব থাকে। একজন নির্ভুল, নিরপেক্ষ আম্পায়ার ক্রিকেটের জন্য সম্পদ। খেলোয়াড়দেরকে মাঠে পরিচালনা করার দায়িত্ব আম্পায়ারদের উপর ন্যস্ত থাকে। আম্পায়ারদেরকে সার্বক্ষণিকভাবে চাপের মধ্য দিয়ে থাকতে হয়। এজন্য একজন আম্পায়ার হতে হলে আপনাকে সবদিকে নজর দিতে হবে। মানুষমাত্রই ভুল করাটা স্বাভাবিক, আম্পায়ারের কাজ হচ্ছে সেই ভুলটাকে সর্বনিম্নে রাখা। ক্রিকেটের জ্ঞান সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রেখে ধৈর্য ধরার মানসিকতা রাখলেই আপনি আম্পায়ার হতে পারবেন।