খেলার মাঠে সুদর্শন ক্রিকেটারদের দেখার জন্য অনেক নারীভক্তই ভীড় জমান, সেই সাথে স্টেডিয়ামের গ্যালারীতে বসে নিজ নিজ স্বামী বা সঙ্গীকে উত্সাহ যোগাতে ভীড় জমান তাদের স্ত্রী বা সঙ্গিনীরাও। বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমের কল্যাণে, ভক্তদের কাছে ক্রিকেটারদের মতই তাদের সঙ্গিনীরাও পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে সকলের প্রতিই স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখতে আসা ও বাড়িতে টেলিভিশনের সামনে বসে খেলা দেখতে থাকা দর্শক এবং সংবাদ মাধ্যমের একই রকম বা সমান আগ্রহ থাকেনা।
তবে এই সঙ্গিনীদের জন্য দর্শক, ভক্ত বা সংবাদ মাধ্যম যে শুধুমাত্র ভালবাসা ও খ্যাতিই বয়ে আনে তা নয়, বরং অনেক সময়ই বিনা কারণে ও সম্পূর্ণরূপে অপ্রাসঙ্গিকভাবে তাদেরকে কঠোর সমালোচনার কাঠগড়ায়ও দাঁড় করায়। কিন্তু এই স্বপ্রতিষ্ঠিত নারীরা কখনই তাদের সঙ্গীদের সমর্থন করতে পিছপা হোন না, অন্তত তাদের বেশিরভাগই খেলোয়াড়দের খারাপ-ভাল সব সময়ই তাদের পাশে থেকে সমর্থন যোগান। ক্রিকেট জগতে বাহ্যিক সৌন্দর্য্যের চেয়েও অনেক বেশি অবদান রাখেন এরকম শীর্ষস্থানীয় ১০ জন প্রভাবশালী সহধর্মিণী সম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানার জন্য লেখাটির শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
ক্রিকেট জগতের ১০ জন প্রভাবশালী স্ত্রীদের তালিকা
নিচের তালিকাটিতে ক্রিকেট জগতের শীর্ষস্থানীয় ১০ জন প্রভাবশালী ও স্বপ্রতিষ্ঠিত স্ত্রীদের সম্পর্কে আলোচনা করা হলেও, এমন আরও অনেকে সঙ্গিনীই আছেন যাদেরকে আমরা প্রায়ই স্টেডিয়ামে এবং স্টেডিয়ামের বাইরে দেখে থাকি। তাহলে চলুন ক্রিকেটারদের অসাধারণ এই সঙ্গিনীদের সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই যারা বেশিরভাগ সময়েই শুধুমাত্র তাদের বাহ্যিক সৌন্দর্য্যের কারণেই আলোচনায় থাকেন। তবে প্রিয় খেলোয়াড়দের এই পারফেক্ট সঙ্গিনীদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর আগে, নিচের তালিকায় উল্লেখ করা তথ্যের মাধ্যমে তাদের সম্পর্কে সংক্ষেপে জানিয়ে দিচ্ছি:
ক্রমিক নং | নাম | স্বামীর নাম | পেশা |
০১ | অনুষ্কা শর্মা | বিরাট কোহলি | অভিনেতা, উদ্যোক্তা |
০২ | রীতিকা সাজদেহ | রোহিত শর্মা | ক্রীড়া ব্যবস্থাপক |
০৩ | অঞ্জলি তেন্দুলকার | শচীন তেন্দুলকার | শিশু বিশেষজ্ঞ |
০৪ | ডোনা গাঙ্গুলী | সৌরভ গাঙ্গুলী | ভারতীয় ওড়িশি নৃত্যশিল্পী |
০৫ | জেসিকা টেলর | কেভিন পিটার্সেন | গায়িকা, টিভি ব্যক্তিত্ব, নৃত্যশিল্পী |
০৬ | লরা ম্যাকগোল্ড্রিক | মার্টিন গাপটিল | বেতার উপস্থাপিকা, সংবাদ পাঠিকা, ক্রীড়া সাংবাদিক, অভিনেতা |
০৭ | ক্যাণ্ডিস ফ্যালজন | ডেভিড ওয়ার্নার | আয়রনওম্যান, সার্ফিং চ্যাম্পিয়ন, মডেল |
০৮ | স্যু ইরাসমাস | জেপি ডুমিনি | ট্রাভেল ব্লগার, উদ্যোক্তা |
০৯ | জেসিকা ব্রেটিক | মিচেল জনসন | ব্যবসায়ী, ক্যারাটে চ্যাম্পিয়ন |
১০ | লী ফার্লং | শ্যেন ওয়াটসন | মডেল, টিভি ব্যক্তিত্ব, ক্রীড়া উপস্থাপক |
ক্রিকেট জগতের ৫ জন ফার্স্ট লেডি
স্বাভাবিক কারণেই যে কোনো দেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ককে একটু বেশিই গভীর ও বিশদ আলোচনা-সমালোচনা এবং নজরদাড়ির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। পেশাগত জীবনের মতই তার ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিও জনসাধারণ ও সংবাদ মাধ্যমের একটু বেশি নজর থাকে, আর সেই সাথে তার স্ত্রী বা সঙ্গিনীকেও একই রকম অবস্থার মধ্য দিয়েই যেতে হয়। প্রিয় অধিনায়ক সম্পর্কে পেশাদার পোশাক ও স্টেডিয়ামের বাইরেও যে ভক্তরা বিস্তারিতভাবে জানতে চাইবে, এমনটাই তো কাম্য! আর এই আগ্রহ এতটাই প্রচণ্ড যে অধিনায়কের স্ত্রী বা সঙ্গিনীকে ক্রিকেট জগতের ‘ফার্স্ট লেডি‘ বলে আখ্যায়িত করাটা বাড়াবাড়ি হবে না।
এই ফার্স্ট লেডি এমন একজন মানুষের জীবন-সঙ্গী ও তার দিনের ২৪ ঘন্টার সঙ্গী যার কাঁধে শুধুমাত্র তার দলেরই নয়, বরং সমগ্র জাতির আবেগ-অনুভূতির দায়িত্বও রয়েছে। স্বামী অধিনায়কের পদ থেকে অবসর নিলেও এই সহধর্মিণীকে কিন্তু সাধরণের নজরদাড়ি ছাড়ে না, হয়তো একটু কমে গিয়ে পরবর্তী অধিনায়কের ব্যক্তিগত জীবনের দিকে চলে যায়। ক্রিকেটের মাঠে স্বামী প্রত্যাশিত অবদান রাখতে ব্যর্থ হলে তাকে চরম সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়, যদিও স্বামীর সাফল্যের ক্ষেত্রে কখনই তার অবদানকে মূল্যায়ন করা হয় না। কিন্তু তিনি কখনই তার সঙ্গীকে সমর্থন যোগানোর দায়িত্বে অবহেলা করেন না।
নিজেদের বিয়ের অনুষ্ঠানে রোহিত শর্মা ও রীতিকা সাজদেহ
অনুষ্কা শর্মা: অভিনেতা, উদ্যোক্তা
ক্রিকেট জগতের মহারথিদের সহধর্মিণীদের বিষয়ে আলোচনা হলে ভারতীয় জাতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক বিরাট কোহলি‘র স্ত্রী অনুষ্কা শর্মার নাম যে সর্বপ্রথম মাথায় আসবে- এমনটা বললে মোটেও বাড়িয়ে বলা হবেনা। তার এই কৃতিত্বের কারণ শুধুমাত্র বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি-র সাথে তার বৈবাহিক সম্পর্কই নয়। অনন্য সুন্দরী এই নারী, বিরাটের সাথে প্রথম দেখা হওয়ার অনেক আগেই, অন্য এক জগতে নিজেকে স্বকীয় মহিমায় সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। ২০১৭ সালে জনপ্রিয় এই জুটি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বর্তমানে তাদের ঘরে রয়েছে একটি কন্যসন্তান “ভমিকা“ (জন্ম: ২০২১) এবং একটি পুত্রসন্তান “অকায়“ (জন্ম: ২০২৪)।
স্নাতক পাস করার পরে অনুষ্কা মডেলিং জগতে যোগ দিয়ে তার ক্যারিয়ার শুরু করেন। ভারতীয় হিন্দি চলচ্চিত্র জগতের তিনি একজন স্বনামধন্য, সফল এবং মেধাবী অভিনেতা যিনি ‘যশ রাজ ফিল্মস্‘ এর ‘রব নে বনা দি জোড়ি‘ ছায়াছবির মাধ্যমে রূপালি পর্দায় আবির্ভুত হোন। প্রথম ছবিতেই তার সহকর্মী ছিলেন ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের ‘বাদশাহ‘ হিসেবে খ্যাত শাহরুখ খান যার বিপরীতে সমান তালে অভিয় করে অনুষ্কা সকলকে তাক লাগিয়ে দেন। শুধু তাই-ই নয়, ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ পারিশ্রমিক অর্জনকারী অভিনেত্রীদের মধ্যে অনুষ্কা অন্যতম। তার অভিনীত অন্যান্য চলচ্চিত্রের মধ্যে পিকে, অ্যা দিল হে মুশকিল, ব্যাণ্ড বাজা বারাত, সুলতান, জব তক হ্যায় জাঁ উল্লেখযোগ্য।
অভিনয়ের দক্ষতার জন্য ‘ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস্‘-এর সেরা চলচ্চিত্র অভিনেতী ও সহঅভিনেত্রী সহ বেশ কিছু পুরস্কারেও অনুষ্কা ভূষিত হয়েছেন। অভিনেত্রী হিসেবে তার পরবর্তী চলচ্চিত্র ‘চক্র এক্সপ্রেস‘ নির্মিত হয়েছে ভারতীয় নারী ক্রিকেটার ঝুলন গোস্বামীর জীবনের গল্পকে কেন্দ্র করে, যা দর্শকরা খুব শীঘ্রই ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্স-এ দেখতে পাবেন। ২০১৩ সালে ভাই ‘কর্ণেষ শর্মা‘র সাথে মিলে অনুষ্কা, ‘ক্লিন স্লেট ফিল্মজ‘ নামে একটি প্রযোজনা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। এনএইচ১০, পরী, পাতাল লোক সহ বেশ কিছু সফল ও জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ও ওয়েব সিরিজ এই প্রযোজনা সংস্থাই নির্মাণ করেছে। তবে ২০২২ সালে অনুষ্কা, ভাইয়ের উপর সমস্ত দায়িত্ব দিয়ে এই সংস্থা থেকে পদত্যাগ করেন।
চলচ্চিত্র জগতের বাইরেও অনুষ্কার, ‘নুশ‘ নামে একটি ফ্যাশন ব্র্যাণ্ড রয়েছে যেটার নাম তার নিজের নামেই রাখা হয়েছে। ২০১৮ সালে ফোর্বস এশিয়ার ‘৩০ আণ্ডার ৩০‘ তালিকায় অনুষ্কা শর্মা স্থান করে নেন। ভারতীয় সেলিব্রেটিদের জনপ্রিয়তা ও আয়ের উপর ভিত্তি করে তৈরি ফোর্বস ইণ্ডিয়া-র ‘সেলিব্রেটি ১০০‘ তালিকায় ২০১২ সাল থেকে তিনি নিয়মিতভাবেই স্থান পেয়ে আসছেন। ভোগ ইণ্ডিয়া সহ দেশি-বিদেশি অনেক ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদেও তিনি একজন নিয়মিত মুখ।
বিভিন্ন সময়ে তিনি অসংখ্য ব্র্যাণ্ডের অ্যাম্বাস্যাডর বা প্রতিনিধি হিসেবেও নিযুক্ত হয়েছেন। বিরাটের সাথে তার প্রথম দেখাও হয়েছিল এরকমই একটি শ্যাম্পুর ব্র্য়াণ্ডের বিজ্ঞাপনচিত্রের নির্মাণ কাজের সময়েই যে ব্র্যাণ্ডের অ্যাম্বাস্যাডর হিসেবে তাদের দুইজনকেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তারা দুইজনেই বেশ কিছু দাতব্য কাজের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত রয়েছেন। তবে ২০২১ সালে পশুদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র ও পশুহাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পরেই অনুষ্কার প্রাণীপ্রেমের কথা জনসম্মুক্ষে প্রকাশিত হয়।
এই অনন্য সাধারণ নারীর জীবনের সমস্ত অর্জন এই একটিমাত্র আর্টিকেলের অংশ হিসেবে তুলে ধরা সম্ভব নয়। অথচ তার এত এত নিজস্ব অর্জনের পরেও বিরাট কোহলি যখন বেশ লম্বা সময়ের জন্য তার স্বাভাবিক ফর্মে ছিলেন না বা ব্যাট হাতে মাঠে তার স্বাভাবিক পার্ফর্ম্যান্সটা দিতে ব্যর্থ হচ্ছিলেন, তখন ভক্তকূল ও সংবাদ মাধ্যম সহ বেশ কিছু অভিজ্ঞ, প্রাক্তন ক্রিকেটারও অনুষ্কাকে বেশ কঠোরভাবে সমালোচনা ও কটাক্ষ করেছিলেন। কিন্তু স্বামীর ভাল সময়ে যেমন তিনি তার সঙ্গী হয়েছেন, তেমনি তার খারাপ সময়েও অনুষ্কা ছায়ার মতই বিরাটের সর্বসময়ের সঙ্গী ছিলেন। ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত আইসিসি-র পুরুষদের একদিনের ক্রিকেট বিশ্বকাপ আসরে অনুষ্কার উপস্থিতি যেমন অনেক বেশি আলোচিত ও প্রশংসিত হয়েছিল, তেমনি দর্শকদের জন্য বিনোদনের খোরাকও যুগিয়েছিল।
রীতিকা সাজদেহ: ক্রীড়া ব্যবস্থাপক
ভারতীয় জাতীয় দলের যে কোনো আন্তর্জাতিক বা ঘরোয়া লীগের খেলায় মাঠে ব্যাট হাতে যখন থাকেন রোহিত শর্মা, সেই সময়ে গ্যালারীতে নিজের দুই হাতের মধ্যমা ও অনামিকাকে একের উপরে অন্যটিকে রেখে বসে থাকতে দেখা যায় স্ত্রী রীতিকা সাজদেহ-কে। এই দৃশ্য এবং এই আচরণের কথা নতুন করে বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু গ্যালারীতে বসে নিজের স্বামীকে এতটা একাগ্রতার সাথে সমর্থন করতে খুব কম স্ত্রীকেই দেখা যায়।
২০০৮ সালে ক্রীড়া সামগ্রীর জনপ্রিয় ব্র্যাণ্ড ‘রিবক‘ এর একটি বিজ্ঞাপন চিত্রের শ্যুটিং এ ভারতীয় জাতীয় দলের বর্তমান অধিনায়ক রোহিত শর্মা, প্রথমবারের মত তার জীবনসঙ্গী রীতিকা সাজদেহ-র সাথে পরিচিত হন। সেই সময়ে স্নাতক পাস করার পরে রীতিকা, ‘কর্ণারস্টোন স্পোর্টস্ এণ্ড এন্টারটেইনমেন্ট‘-এ ক্রীড়া ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। রীতিকার ‘রাখি ভাই‘ ও ভারতীয় ক্রিকেট জগতের জনপ্রিয় মহারথি যুবরাজ সিংহ, রোহিত ও রীতিকা-কে পরিচয় করিয়ে দেন। ২০১৫ সালে রোহিত ও রীতিকা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন এবং বর্তমানে তাদের ঘরে রয়েছে ‘সামাইরা‘ (জন্ম: ২০১৮) নামে একটি কন্যাসন্তান।
বর্তমানে, বিভিন্ন ক্রিকেট আসরে যোগদানের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে স্বামী রোহিতের ভ্রমণসহ অন্যান্য সকল প্রয়োজনীয় বিষয় রীতিকা একজন পেশাদার ব্যবস্থাপক হিসেবেই ব্যবস্থাপনা করে থাকেন। রীতিকার সাথে বৈবাহিক জীবনে আবদ্ধ হওয়ার পর থেকেই রোহিতের ক্যারিয়ারে উত্তরোত্তর উন্নতি ঘটেছে। আর তাই তো নিজের করা ৩য় ২০০-রানের অনবদ্য স্কোরটি বিবাহের উপহার হিসেবে তার এই পার্ফেক্ট জীবন সঙ্গীকেই উত্সর্গ করেছেন রোহিত।
স্ত্রী অঞ্জলির সাথে ক্রিকেট জগতের জীবন্ত কিংবদন্তী শচীন তেন্দুলকার
অঞ্জলি তেন্দুলকার: শিশু বিশেষজ্ঞ
শিল্পপতি বাবা আনন্দ মেহতা ও ইংরেজ মা অ্যানাবেল মেহতা‘র কন্যা অঞ্জলি তেন্দুলকার-এর জন্ম অত্যন্ত উচ্চ-শিক্ষিত ও বিত্তশালী এক পরিবারে। চিকিত্সা শাস্ত্রে পেশা জীবন শুরু করে অঞ্জলি একজন শিশু বিশেষজ্ঞ হিসেবে অত্যন্ত সফলভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ১৯৯৫ সালে ভারতীয় তথা বিশ্ব ক্রিকেটের জীবন্ত কিংবদন্তী ও ভারতীয় জাতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক শচীন তেন্দুলকারের সাথে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন এবং বর্তমানে তাদের ঘরে সারাহ ও অর্জুন নামে দুই ছেলেমেয়ে রয়েছে।
অঞ্জলি ও শচীন যদিও নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনকে লোকচক্ষুর আড়ালে রাখতেই পছন্দ করেন, তারপরেও তাদের প্রেমকাহিনী কোনো কিংবদন্তী গল্পের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। ইংল্যাণ্ড থেকে একটি পেশাগত সফর থেকে ফিরে মুম্বই বিমানবন্দরে দলের সাথেই অপেক্ষমান ছিলেন শচীন, আর একই স্থানে নিজের মা‘কে বিদায় জানানোর জন্য উপস্থিত ছিলেন অঞ্জলি। সেখানেই অঞ্জলির মা তাদের দুইজনকে পরিচয় করিয়ে দেন।
শচীনের বয়স তখন ছিল মাত্র ১৭ বছর এবং ক্রিকেট জগতে তখনও তিনি জনপ্রিয়তার দেখা পাননি বললেই চলে। অন্যদিকে ২৩ বছর বয়সী পেশাদার শিশু বিশেষজ্ঞ অঞ্জলি সেই সময়ে ক্রিকেট জগত বা ক্রিকেটারদের সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞাত ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই তিনি শচীনকে তখন খুব একটা পাত্তা দেননি। কিন্তু পরবর্তীতে এক বন্ধুর বাড়িতে দাওয়াত খেতে গিয়ে তাদের আবারো দেখা হয় এবং সেখান থেকেই তাদের প্রেমকাহিনীও আরম্ভ হয়।
ডোনা গাঙ্গুলী: ভারতীয় ওড়িশি নৃত্যশিল্পী
ক্রিকেট জগতের আরও একটি ‘হ্যাপিলি এভার আফ্টার‘ স্বরূপ গল্পের প্রত্যক্ষ প্রমাণ ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী ও স্ত্রী ডোনা গাঙ্গুলী জুটির প্রেমকাহিনী। আসলে এটাকে রোমিও-জুলিয়েট গল্পের একটি সফল নিদর্শন বলাই শ্রেয় যা সকল প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবিলা করে বহাল তবিয়তে টিকে আছে। ডোনা গাঙ্গুলীর জন্ম এক ব্যবসায়ী পরিবারে যে পরিবারের সাথে তার বর্তমান জীবনসঙ্গী সৌরভ গাঙ্গুলীর পরিবারের ছিল আজন্ম শত্রুতা। ছেলেবেলার বন্ধু ডোনা ও সৌরভ সময়ের সাথে সাথে প্রণয়ের সম্পর্কে জড়িয়ে পরেন।
১৯৯৭ সালে সৌরভ যখন সবে পেশাদার ক্রিকেট জীবনের যাত্রা শুরু করেছেন, কিন্তু তখনও দলে স্থায়ীভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে উঠতে পারেননি, ঠিক সেই সময়েই ডোনা ও সৌরভ পালিয়ে বিয়ে করেন। স্বাভাবিকভাবেই প্রাথমিক পর্যায়ে দুই পরিবারের কেউই এই বিয়ে মেনে নেয়নি, তবে পরবর্তীতে পরিবারের সম্মতিক্রমেই ঘটা করে তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। ২০০১ সালে সৌরভ-ডোনার ঘরে মেয়ে সানা‘র আগমন ঘটে।
মাত্র ৩ বছর বয়সে ডোনা নাচের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। প্রসিদ্ধ ‘লরেটো কনভেন্ট স্কুল অফ কলকাতা‘ থেকে পড়াশোনা শেষ করার পরে নাচকেই তিনি পেশা হিসেবে বেছে নেন। পরবর্তীতে গুরু গিরিধারি নায়েক-এর তত্ত্বাবধানে তিনি ওড়িশি নাচে প্রশিক্ষিত হোন। এমনকি ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যের কিংবদন্তী শিল্পী কেলুচরণ মোহাপাত্র ছিলেন ডোনার পেশাজীবনের সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রশিক্ষক।
বর্তমানে ডোনা তার নিজের নাচের দল ও প্রশিক্ষন প্রতিষ্ঠান ‘দীক্ষা মঞ্জরী‘ পরিচালনায় নিয়োজিত আছেন। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন করেন প্রয়াত ভারতীয় কিংবদন্তী সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর। ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যে প্রশিক্ষণ প্রদানের পাশাপাশি এই প্রতিষ্ঠানে চিত্রাঙ্কন, কারাটে, যোগব্যয়াম ও সাঁতারের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। একাধারে প্রায় ২০০০ ছাত্রছাত্রীকে এই প্রতিষ্ঠান প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
স্ত্রী ডোনা ও মেয়ে সানা‘র সাথে সৌরভ গাঙ্গুলী
জেসিকা টেলর: গায়িকা, টিভি ব্যক্তিত্ব, নৃত্যশিল্পী
ইংল্যাণ্ডের জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন টেস্ট অধিনায়ক ও কিংবদন্তীতুল্য ব্যাটসম্যান কেভিন পিটার্সেন ও স্ত্রী জেসিকা টেলরের প্রেমকাহিনী অনায়াসেই কোনো ভারতীয় চলচ্চিত্রের গল্প হয়ে উঠতে পারে। পিটার্সেন ও জেসিকার প্রথম পরিচয় হয় ইংল্যাণ্ড ও পাকিস্তানের মধ্যে অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচে যেখানে সেই সময়ে ইংল্যাণ্ডের জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী জেসিকাকে তার দেশের জাতীয় সংগীত গাইবার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। ব্যাকস্টেজেই দুইজনের মধ্যে আলাপ জমে উঠে এবং প্রায় তত্ক্ষণাত্ তারা একে অন্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পরেন।
পেশাগত জীবনে জেসিকা একজন প্রসিদ্ধ সংগীত শিল্পী এবং টিভি ব্যক্তিত্ব। তবে তিনি সবচেয়ে বেশি পরিচিত ‘লিবার্টি এক্স‘ নামের পপ সংগীত দলের প্রতিষ্ঠাতা, মূল গায়িকা ও নৃত্যশিল্পী হিসেবে। ‘বেস্ট ব্রিটিশ সিঙ্গেল‘ ও ‘বেস্ট ব্রিটিশ ব্রেকথ্রু আর্টিস্ট‘- এই দুই ক্ষেত্রে লিবার্টি এক্স ‘ব্রিট অ্যাওয়ার্ড‘- এ ভূষিত হয়। ২০০৫ সালে তিনি বিবিসি‘র ‘স্ট্রিক্টলি আইস ড্যান্সিং‘ নামের একটি প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। ২০১৩ সালের নভেম্বরে তিনি ‘দ্য চেজ‘ নামের একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হোন এবং ৭৫,০০০ ব্রিটিশ পাউণ্ড পুরস্কার লাভ করেন। এগুলো ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তিনি ‘ড্যান্সিং অন দ্য আইস‘, ‘দ্য উইকেস্ট লিংক‘, ‘হোল ইন দ্য ওয়াল‘ সহ আরও অনেক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
সম্পর্কের শুরু থেকেই পিটার্সেন ও জেসিকা দুইজনই নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ত থাকেন যার ফলে বেশিরভাগ সময়েই একে অন্যের থেকে অনেক দূরে অবস্থান করতে থাকেন। এমনকি একটা সময়ে পিটার্সেনের বিরুদ্ধে পরকীয়ার গুজবও শোনা যায়। তারপরেও সকল প্রতিকূলতার মোকাবিলা করে এই জুটি নিজেদের সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখেন এবং ২০০৭ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন। ২০১০ সালে তাদের ঘরে আসে পুত্র ডিল্যান এবং ২০১৫ সালে আসে কন্যা রোজি।
অন্যান্য ক্রিকেটারদের প্রভাবশালী ও স্বপ্রতিষ্ঠিত সহধর্মিণী
লরা ম্যাকগোল্ড্রিক: বেতার উপস্থাপিকা, সংবাদ পাঠিকা, ক্রীড়া সাংবাদিক, অভিনেতা
নিউ জিল্যাণ্ডের জনপ্রিয় ওপেনিং ব্যাটসম্যান মার্টিন গাপটিল ও দেশটির প্রসিদ্ধ বেতার উপস্থাপিকা লরা ম্যাকগোল্ড্রিক ২০১৪ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন এবং বর্তমানে এই জুটি হারলে ও টেডি নামের দুই সন্তানের পিতামাতা। ২০১১ সালে ‘স্কাই স্পোর্টস্‘-এ প্রচারিত ‘দ্য ক্রিকেট শো‘ এর মাধ্যমে তিনি সর্বপ্রথম সর্বসাধারণের কাছে পরিচিতি লাভ করেন। আর তারপর থেকে তিনি নিয়মিতভাবে দেশে ও দেশের বাইরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে সাংবাদিকতা করেছেন, পাশাপাশি উপস্থাপনা ও ব্লগিংও করেছেন। এছাড়া এনজেড হেরাল্ড ফোকাস-এ তিনি একজন নিয়মিত উপস্থাপিকা। নিউ জিল্যাণ্ডের ড্রামা সিরিজ ‘ওয়েস্ট সাইড‘-এর মাধ্যমে অভিনয় জগতে তার অভিষেক ঘটে।
ক্যাণ্ডিস ফ্যালজন: আয়রনওম্যান, সার্ফিং চ্যাম্পিয়ন, মডেল
অস্ট্রেলীয় দুর্দান্ত ব্যাটসম্যান ডেভিড ওয়ার্নার ও দেশটির প্রসিদ্ধ সুপার মডেল ক্যাণ্ডিস ফ্যালজন-এর প্রেম কাহিনী যে কোনো সিনেমার গল্পের মতই। ২০১৩ সালে অ্যাসেজ সিরিজের জন্য ডেভিড যখন ইংল্যাণ্ডে অবস্থান করছিলেন তখন দেশের বাইরে থাকায় তার কষ্টের কথা চিন্তা করে ক্যাণ্ডিস বেশ হুট করেই তাকে এক্স (প্রাক্তন টুইটার)-এ একটি মেসেজ পাঠান। ঐ ম্যাসেজের সূত্র ধরেই তাদের মধ্যে অনলাইন চ্যাটিং শুরু হয় যা খুব শীঘ্রই স্কাইপ কলে পরিবর্তিত হয়ে যায়। আর অল্প সময়ের মধ্যেই পরিচয় পরিণয়ে পরিণত হয়।
মজার ব্যাপার হচ্ছে ২০১৫ সালে এই জুটি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আগের বছরেই ২০১৪ সালে তাদের প্রথম কন্যা সন্তান ঈভি মে‘র জন্ম হয়। পরবর্তীতে তাদের ঘরে ইণ্ডি রে এবং ইলা রোজ নামে আরও দুই কন্যা সন্তানের আগমন ঘটে। তবে ক্যাণ্ডিসের পরিচিতি কিন্তু শুধুমাত্র একজন সুন্দরী সুপার মডেল হিসেবেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি অস্ট্রেলিয়ার একজন প্রাক্তন পেশাদার আয়রনওম্যান এবং সার্ফিং চ্যাম্পিয়ন।
মাত্র ১৪ বছর বয়সে তিনি আয়রনম্যান প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। সার্ফিং এর সাথে জড়িত চারটি ভিন্ন ভিন্ন ক্রীড়ার সমন্বয়ে এই আয়রনম্যান সিরিজের একটি রেস সংঘটিত হয়: সাঁতার, বোর্ড প্যাডেলিং, স্কী প্যাডেলিং ও দৌড়। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই ক্যাণ্ডিস নিজেকে একজন ‘এনএসডব্লিউ স্টেট আয়রনম্যান চ্যাম্পিয়ন‘ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। এছাড়া টিভিতে প্রচারিত সংগীত বিষয়ক প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান ‘ইট টেকস্ টু‘-তে এবং বাস্তবতাভিত্তিক রান্না বিষয়ক অনুষ্ঠান অস্ট্রেলীয় ‘হেল্স কিচেন‘-এও তাকে দেখা যায়।
স্ত্রী জেসিকা টেলরের সাথে কেভিন পিটার্সেন
স্যু ইরাসমাস: ট্রাভেল ব্লগার, উদ্যোক্তা
দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট জগতের ‘কুইন ডব্লিউএজি‘ (ওয়াইফ এণ্ড গার্লফ্রেণ্ড) নামে খ্যাত স্যু ইরাসমাস তথা স্যু ডুমিনী এবং দেশটির অত্যন্ত জনপ্রিয় ও কিংবদন্তীতুল্য ক্রিকেটার জেপি ডুমিনীর প্রণয় ও পরিণয়ের কাহিনী দেশটিতে ভীষণ লোকপ্রিয়। এই দুইজনের প্রথম পরিচয় ঘটে ২০০৮ সালে যা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আজীবনের বন্ধনে পরিণত হয়।
দক্ষিণ আফ্রিকার মডেল স্যু, বিয়ের পরে ফ্যাশন, ফিটনেস, মাতৃত্ব এবং বিভিন্ন ধরনের সমাজিক কর্মকাণ্ড সংক্রান্ত বিষয়ে ব্লগিং করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন এবং ‘ইন্সপায়ার্ড উওমেন‘ নামের ব্লগ ওয়েবসাইট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি একজন উদ্যোক্তা হিসেবে যাত্রা শুরু করেন। ইসাবেলা ও অ্যালেক্সা রোজ নামের দুই কন্যা সন্তানের জন্মের পরেও স্যু, নিজের সুস্বাস্থ্য ও নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে ফিটনেস বজায় রেখে অন্যান্য অনেক মা-দের প্রেরণা যুগিয়েছেন। মডেলিং এর পাশাপাশি তিনি রান্নাবান্না ও বেকিং এও স্বচ্ছন্দ এবং ‘দ্য গ্রেট প্যাভিলিয়ন‘ সহ সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানেও তাকে দেখা গিয়েছে।
এছাড়া তিনি সমাজকল্যাণ মূলক কাজের সাথেও সক্রিয়ভাবে জড়িত। ‘নেহেমিয়াহ সেফ হাউস‘ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য তিনি ব্র্যাণ্ড অ্যাম্বাস্যাডর হিসেবে কাজ করেন, এই প্রতিষ্ঠানটি শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় যত্ন, আশ্রয় ও সুরক্ষা প্রদানের এবং ব্রেস্ট ক্যান্সার বিষয়ক সচেতনতা প্রচারের কাজ করে থাকে। এছাড়া মোটিভেশনাল বইয়ের সহ-লেখিকা হিসেবেও তিনি অবদান রেখেছেন।
জেসিকা ব্রেটিক: ব্যবসায়ী, ক্যারাটে চ্যাম্পিয়ন
কন্যা রুবিকা অ্যান ও পুত্র লিও ম্যাক্স এর পিতা ও মাতা যথাক্রমে বিশ্বের সকল ব্যাটসম্যানদের ঘুম হারাম করা অস্ট্রেলিয়ার দাপুটে বোলার মিচেল জনসন ও তার স্ত্রী জেসিকা ব্রেটিক। কিন্তু এই দুই সন্তানের আগমনের আগে এই জুটির চুটিয়ে প্রেম করার গল্প সংবাদ মাধ্যমে বেশ ফলাও করেই প্রকাশ হয়েছিল। ২০১১ সালে মাত্র ৫০ জন অতিথির উপস্থিতিতে তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। কিন্তু এর বেশ কয়েক বছর আগে তাদের প্রথম দেখা হয় পার্থ-এ এবং সেখান থেকেই তাদের সম্পর্কের শুরু। সেই সময়ে মিচেল ব্রিসবেন-এ ক্রিকেট খেলতেন। কিন্তু জেসিকার ব্যক্তিত্বে তিনি এতটাই মুগ্ধ হয়ে পরেন যে নিজের কর্মক্ষেত্র পরিবর্তন করে ওয়েস্টার্ন ওয়্যারিয়ার্স-এ আসার জন্য আবেদন করেন।
জেসিকার পরিচয় শুধুমাত্র বিখ্যাত ক্রিকেটারের স্ত্রী ও দুই সন্তানের জননী হিসেবেই সীমিত নয়। তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী এবং একজন ক্যারাটে চ্যাম্পিয়ন। ২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত ‘ওয়ার্ল্ড ক্যারাটে চ্যাম্পিয়নশিপ‘-এ তিনি ব্রোঞ্জ মেডেল অর্জন করেন। এছাড়া তিনি মার্শাল আর্টে ব্ল্যাক বেল্টও অর্জন করেছেন। তিন ‘মাস কম্যুনিকেশন‘-এ স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। তিনি নিজে একজন ব্যাগ ডিজাইনার হিসেবে একটি অ্যাক্সেসরিজ বা সাজপোশাকের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সামগ্রীর ব্যবসায় প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং বর্তমানে সেই ব্যবসায়ের পরিচালনায় জড়িত আছেন।
লী ফার্লং: মডেল, টিভি ব্যক্তিত্ব, ক্রীড়া উপস্থাপক
অস্ট্রেলিয়ার আরেক কিংবদন্তী বোলার শ্যেন ওয়াটসন ও মডেল লী ফার্লং ২০১০ সালের জুন মাসে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন। বর্তমানে তাদের ঘরে রয়েছে উইলিয়াম (জন্ম: ২০১৩) নামে একটি পুত্র সন্তান ও ম্যাতিল্ডা ভিক্টোরিয়া (জন্ম: ২০১৫) নামে একটি কন্যা সন্তান। ক্রিকেট জগতের এই সহধর্মিণী তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন লোকচক্ষুর আড়ালে রাখতেই বেশি পছন্দ করেন। এই দম্পতির উভয়েই ‘ম্যাকগ্রা‘ ফাউণ্ডেশনের সাথে অ্যাম্বাস্যাডর হিসেবে জড়িত। অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন কিংবদন্তী বোলার গ্লে ম্যাকগ্রা এই দাতব্য প্রতিষ্ঠানটি তার স্ত্রীর সম্মানে প্রতিষ্ঠা করেন যিনি ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
তবে মডেলিং ও সমাজকল্যাণ মূলক কাজের সাথে জড়িত থাকা ছাড়াও লী নিজের পেশাজীবনে স্বপ্রতিষ্ঠিত। ‘কম্যুনিকেশন্স ও জার্নালিজম‘-এ স্নাতক পাস করার পরে ২০০৪ সালে তিনি ‘চ্যানেল ১০‘- এর ‘স্পোর্টস্ টুনাইট‘ ও ‘সিরিয়াসলি এএফএল‘ নামের দুইটি অনুষ্ঠানে উপস্থাপিকা হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেন। দুই বছর পরে তিনি ২৪-ঘন্টা ক্রীড়া সংবাদ প্রচারকারী চ্যানেল ‘ফক্স স্পোর্টস্‘-এ যোগদান করেন। পেশাজীবনের শুরুতেই নিজের নিষ্ঠার স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ‘ডেইলি টেলিগ্রাফ‘-এর ‘নিউকামার অফ দ্য ইয়ার‘ পুরস্কারে ভূষিত হোন।
নিজেদের বিয়ের অনুষ্ঠানে মিচেল জনসন ও জেসিকা ব্রেটিক
দশকের পর দশক ধরে চলতে থাকা ক্রিকেট খেলার সাথে পেশাগত পরিসরে জড়িত অসংখ্য কিংবদন্তী ও কিংবদন্তীতুল্য খেলোয়াড় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাদের প্রায় অনেকেরই স্ত্রী ও জীবনসঙ্গিনীরাও স্ব-স্ব স্থানে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু নিজ নিজ পেশাগত জীবনে ব্যস্ত ও প্রতিষ্ঠিত হলেও তাদের কেউই সঙ্গীকে সমর্থন করতে বা পরিবারকে সময় দিতে পিছিয়ে থাকেন না। অনেকেই তাদের ব্যক্তিগত জীবনকে লোকচক্ষুর আড়ালে রাখতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কিন্তু তাতে কি আর ভক্তদের আগ্রহকে বা সংবাদ মাধ্যমকে দমিয়ে রাখা সম্ভব, বিশেষ করে এই ডিজিটাল যুগে?