ছোটবেলায় স্কুলে পড়ার সময়ে প্রতিটি শিশুকেই একটা প্রশ্ন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে শুরু করে আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশি সকলের থেকেই শুনতে হয়: ‘বড় হয়ে কী হতে চাও?‘ আর এই প্রশ্নটাই বাবা-মা‘কে সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় ভুগিয়ে থাকে। আমাদের দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে সরকারি চাকরি সবচেয়ে কাম্য পেশা। কিন্তু বড় হয়ে কী হতে চাও এর উত্তরে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার ছাড়া অন্য কোনো শব্দ উচ্চারণ করলেও আজ থেকে দশ-পনের বছর আগেও বাবার হাত পিটুনি বা মায়ের কাছে বকুনি নিশ্চিত ছিল।
কিন্তু ডিজিটাল যুগের সর্বত্র বিস্তারের অনেক আগেই একটি বিশেষ ধরনের সরকারি চাকুরি এদেশের অসংখ্য ছেলেমেয়ের জীবনের লক্ষ্য হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। বেশ অনেক বছর ধরেই বাবা-মাদেরও এই পেশায় তেমন আপত্তিও নেই। পেশাটি হলো: জাতীয় দলের ক্রিকেটার। জীবনের এই লক্ষ্যকে অর্জন করতে হলে প্রয়োজন হয় ক্রিকেট একাডেমির পেশাদার প্রশিক্ষণের। সেরকমই একটি ক্রিকেট একাডেমি ‘কোয়ালিটি স্কুল অফ ক্রিকেট‘ সম্পর্কে বিস্তারিত থাকছে এই আর্টিকেলে।
ক্রিকেট একাডেমির প্রয়োজনীয়তা
শুধু মেধা আর পরিশ্রমই এই পেশার জন্য যথেষ্ট নয়। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বলতে এক্ষেত্রে বই এর পড়া মুখস্থ করে পরীক্ষায় খাতায় উগলে দিয়ে বেশি বেশি নম্বর পাওয়াকে বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়াকে বুঝায় না। বরং নিয়মিত কঠোর পরিশ্রম ও একনিষ্ঠভাবে বিশেষ অনুশীলন করে নিজেকে যোগ্য করে তুলতে হয় একের পর এক ‘ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ‘ হওয়ার জন্য। এই বিশেষ অনুশীলনের জন্যই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ক্রিকেট একাডেমি, যেখানে অভিজ্ঞ কোচ ও প্রাক্তন ক্রিকেটার এবং পেশাদার কোচেরা নিজেদের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও ব্যবহারিকভাবে লব্ধ জ্ঞানের মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যত্ ক্রিকেট প্রজন্ম গড়ে তোলেন।
সরকারি ও বেসরকারি উভয় ধরনের ক্রিকেট একাডেমিই বাংলাদেশে রয়েছে, যদিও প্রতিবেশি দেশের তুলনায় সংখ্যায় অনেক কম। এমনকি এই ক্রিকেট একাডেমির প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব সম্পর্কেও অনেকে ঠিক নিশ্চিত নন। কারণ, আমাদের দেশে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)-এর মত আরও অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে প্রায় নামমাত্র খরচে ক্রীড়া প্রশিক্ষণ নেওয়া যায়। তাহলে আলাদাভাবে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি বেতন দিয়ে ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি হয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণের কী প্রয়োজন?
নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার পরেও কিন্তু ডাক্তার হওয়ার জন্য কঠিন এক ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিশেষ পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণের পরেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে হয়। সুতরাং ক্রিকেটকে একটা সুযোগ কেন দিবেন না? এছাড়া পেশাদার ক্রিকেট প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আপনার সন্তানের শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্য এবং দৃঢ় মনোবল ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের শিক্ষাও ছোটবেলা থেকেই নিশ্চিত করা সম্ভব হয়, যা জাতীয় দলের ক্রিকেটার হওয়া থেকে শুরু করে জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে ও পেশায় সাফল্য অর্জনেও অত্যাবশ্যক। আর এই বিষয়গুলি কোয়ালিটি স্কুল অফ ক্রিকেট-এ বেশ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়। চলুন এই ক্রিকেট একাডেমি সম্পর্কে আরেকটু বিস্তারিত জেনে নিই।
কোয়ালিটি স্কুল অফ ক্রিকেট, চট্টগ্রাম
বাংলাদেশের নারী ও পুরুষ উভয় জাতীয় দলের কিক্রেটারেরাই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের জন্য যথেষ্ট সাফল্য বয়ে এনেছেন। তাই দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যত্ প্রজন্মকে আরও উন্নত করার জন্য সরকারি-বেসরকারি উভয় উদ্যোগেই বেশ কিছু পেশাদার ক্রিকেট প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে যেগুলোর বেশিরভাগই রাজধানী ঢাকা শহর বা এর আশেপাশে অবস্থিত। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রিকেট অনুরাগী শিশু-কিশোরেরা বাড়ি থেকে বেশ দূরে এসে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। ঢাকার বাইরে যে হাতে গোণা কয়েকটি ক্রিকেট একাডেমি রয়েছে সেগুলোর মধ্যে চট্টগ্রামের কোয়ালিটি স্কুল অফ ক্রিকেট অ্ন্যতম প্রসিদ্ধ।
কোয়ালিটি ক্রিকেট একাডেমি
কোয়ালিটি স্কুল অফ ক্রিকেট, স্বনামধন্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সানোয়ারা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম শহরে এই প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব একটি স্টেডিয়ামও রয়েছে। শহরের চাঁদগাঁও এলাকার নুরুজ্জামান নাজির বাড়ি রোডে, হাজেরা-তাজু স্কুল এণ্ড কলেজ-এর ঠিক পাশেই কোয়ালিটি স্কুল অফ ক্রিকেট অবস্থিত। এখানে একই সাথে তিনটি খেলার মাঠ রয়েছে, অন্য দুইটি হলো: আহিয়ান স্পোর্টস্ এরেনা এবং হাজেরা-তাজু ডিগ্রী কলেজ মাঠ। ম্যাপে খেয়াল করলে দেখা যাবে, শহরের মধ্যে বেশ বড় একটি অংশ জুড়েই রয়েছে এই মাঠ তিনটি। অর্থাত্, খেলাধুলার জন্য এই পরিবেশ একেবারে আদর্শ।
কোয়ালিটি স্কুল অফ ক্রিকেট মাঠে চলছে ক্রিকেট ম্যাচ
কোয়ালিটি স্কুল অফ ক্রিকেটই ‘কোয়ালিটি ক্রিকেট একাডেমি‘ নামে ইন্টারনেটে ও স্থানীয়দের কাছে পরিচিত, যদিও এই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ইন্টারনেটে তেমন কোনো তথ্য নেই কারণ তাদের ওয়েবসাইট এখনো প্রকাশিত হয়নি। তবে আগ্রহীদের যোগাযোগের জন্য রয়েছে একটি মুঠোফোন ও হোয়াট্সঅ্যাপ নম্বর, এবং ইমেইলে যোগাযোগের ঠিকানাও আছে। আর আছে একটি ফেসবুক পেজ, কিন্তু সেখানেও যথেষ্ট পরিমাণ তথ্য নেই। সুতরাং বুঝাই যাচ্ছে, এই একাডেমি এখনো স্থানীয় শিক্ষার্থীদেরকে প্রাধান্য দিয়েই পরিচালিত হচ্ছে। তাই ভর্তি সংক্রান্ত তথ্যের জন্য সরাসরি এই একাডেমিতে গিয়ে যোগাযোগ করাই শ্রেয়।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারির মাসের শুরু থেকেই এই একাডেমির যাত্রা শুরু হয়। অনূর্ধ্ব-৮ থেকে অনূর্ধ্ব-১৬ সহ বিভিন্ন বয়সের ছেলেদের জন্য এখানে অভিজ্ঞ কোচ দ্বারা ক্রিকেট প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে বার্ষিক ফি ১,০০০ টাকা থেকে ১,৫০০ টাকা এবং মাসিক ফি ৬০০ টাকা। তবে বিভিন্ন গ্রুপের বা বিভিন্ন সময়ব্যাপী প্রশিক্ষণের উপর নির্ভর করে ফি পরিবর্তিত হতে পারে। সাধারণত বিকালের দিকে প্রশিক্ষণ শুরু হলেও, এই একাডেমি মোটামুুটি সারাদিনই সক্রিয় থাকে।
কোয়ালিটি ক্রিকেট একাডেমি‘র সুযোগ-সুবিধাসমূহ
ক্রিকেট খেলার জন্য উন্নতমানের সরঞ্জামাদি ও অভিজ্ঞ কোচ- এই দুইটি ব্যবস্থা থাকলেই একটি ক্রিকেট প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানকে গুণেমানে নির্ভরশীল বিবেচনা করা যায়। সেই সাথে আরও যে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, কোনো নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পাওয়া প্রশিক্ষণ ব্যবহারিকভাবে কাজে লাগানোর যথার্থ সুযোগ। এই দিক দিয়ে, কোয়ালিটি ক্রিকেট একাডেমি যথেষ্ট প্রশংসার দাবিদার কারণ এখানকার শিক্ষার্থীরা নিয়মিতভাবে জেলা পর্যায়ে ও অন্যান্য দলগত টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে, ভাল পার্ফর্ম্যান্স করে এবং বিজয়ীও হয়। এছাড়া এখানকার শিক্ষার্থীরা নিয়মিতভাবেই জেলা পর্যায়ের দলে নির্বাচিতও হয়ে থাকে।
এই একাডেমি কর্তৃক আয়োজিত বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করতে হলে, এই পর্যায়ের অন্যান্য যে কোনো টুর্নামেন্টের মত বিভিন্ন দলকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন হয়। এখানে অনুষ্ঠিত পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রায়ই জাতীয় দলের প্রাক্তন খেলোয়াড়েরা উপস্থিত হয়ে থাকেন। কিন্তু এগুলোর পাশাপাশি, আরও কিছু সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা থাকা যে কোনো প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য আবশ্যক। আর কোয়ালিটি‘র কর্তৃপক্ষ সেদিকেও সচেতন। এই ক্রিকেট একাডেমির সাধারণ সুযোগ-সুবিধাসমূহ নিম্নরূপ:
- প্রশস্ত খেলার মাঠ
- অনুশীলনের জন্য পৃথক মাঠ
- নিরাপদে নেটে অনুশীলনের ব্যবস্থা
- অত্যাধুনিক বোলিং ম্যাশিন
- প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ও অভিজ্ঞ কোচ দ্বারা প্রশিক্ষণ প্রদান
- যাতায়াতের সুব্যবস্থা
কোয়ালিটি স্পোর্টস্ ক্লাব
কোয়ালিটি স্কুল অফ ক্রিকেট বা ক্রিকেট একাডেমির একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান কোয়ালিটি স্পোর্টস্ ক্লাব যেখানে ক্রিকেট ছাড়াও অন্যান্য খেলাধুলার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, বিশেষ করে ক্যারাটে। আর এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা নিয়মিতভাবে বিভিন্ন ক্যারাটে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের অবকাঠামো এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার কথা চিন্তা করলে, বেসরকারি ক্রিকেট একাডেমি বেশিরভাগ মানুষের সামর্থ্যের বাইরেই পরে বলাটা একেবারে ভুল হবে না। কারণ, পরিবারের অন্যান্য খরচ বহন করার পরে, এবং সন্তানদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সদা-বাড়ন্ত খরচের পরে ক্রিকেট একাডেমিতে প্রশিক্ষণের বিষয়টা মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য বিলাসিতাই বৈ আর কিছু নয়। দেশের বেশিরভাগ মানুষই অর্থনৈতিকভাবে মধ্যবিত্তের কাতারেই পরে। কিন্তু কোয়ালিটি ক্রিকেট একাডেমির মাসিক খরচ অনেকেরই সাধ্যের মধ্যে বলা যায়। আর সুযোগ-সুবিধাও বেশ উন্নত। সুতরাং অনেক বড় একটা স্বপ্ন পূরণের জন্য এই একাডেমিটি হয়ে উঠতে ভবিষ্যতের অনেক মেধাবী ক্রিকেটার তৈরির কারখানা!