Sheikh Hasina International Cricket Stadium বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এক আশার বাতিঘরের নাম। ২০২৬ সালে উদ্বোধন হতে যাওয়া এই স্টেডিয়াম ক্রিকেটে বাংলাদেশের দিনবদলের সাক্ষী হয়ে থাকবে। এটি রাজধানী ঢাকার পূর্বাচল মডেল টাউনের ১নং সেক্টরে অবস্থিত। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন এই স্টেডিয়ামটি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড একদম নিজ খরচে নির্মাণ করছে।
Sheikh Hasina International Cricket Stadium এর অবস্থান
Sheikh Hasina International Cricket Stadiumটি ঢাকার পূর্বাচলে অবস্থিত। মাল্টি বিলিয়ন ডলারের এই প্রজেক্টের ১ নং সেক্টরে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে এই স্টেডিয়ামকে। মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম থেকে এর দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার। পূর্বাচল এক্সপ্রেস হাইওয়েতে এই ক্রিকেট স্টেডিয়ামটি নির্মিত হচ্ছে।
Sheikh Hasina International Cricket Stadium এর সুযোগ-সুবিধা
Sheikh Hasina International Cricket Stadiumকে একটি বহুমুখী সুবিধাসম্পন্ন ক্রিকেট স্টেডিয়াম হিসেবে দাঁড় করার পরিকল্পনা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। এর উদ্বোধন হওয়ার পর বিসিবি তাদের হেডকোয়ার্টার মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়াম থেকে সরিয়ে এই স্টেডিয়ামে নিয়ে যাবে। ক্রিকেট ছাড়াও এই স্পোর্টস কমপ্লেক্সে ইনডোর খেলাধুলা এবং ওয়াটার স্পোর্টসের সুবিধা থাকবে। খেলার জন্য অবকাঠামো ছাড়াও ট্রানজিট সুবিধাসম্পন্ন একটি পাঁচ তারকা হোটেল প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া পুল, জিম, প্যাভিলিয়নের সুবিধা থাকছে। এর নির্মাণ খরচ ধরা হচ্ছে ৬০ কোটি টাকা। বাইরের অংশে একটি ২৫০০ দর্শক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন স্টেডিয়াম থাকবে যেখানে আর্ট পারফর্মেন্সের সুযোগ থাকছে। নির্মাণশৈলীর কারণে এটিকে নৌকা বলেও ডাকা হয়ে থাকে। কক্সবাজারের শেখ কামাল স্টেডিয়ামের পর এটি দ্বিতীয় স্টেডিয়াম হতে যাচ্ছে যার পুরো খরচ বিসিবি নিজেই বহন করবে। নির্মাণের পর এটি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের হোম ভেন্যুর পাশাপাশি বিপিএল এর ঢাকা ফ্র্যাঞ্জাইজি দলের হোম ভেন্যু হিসেবেও গণ্য হবে। ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আউটার স্টেডিয়ামে নানান সুযোগ-সুবিধা থাকবে। মাঠটির সাথে একটি স্টেডিয়ামও যুক্ত থাকবে।
পূর্বাচল নিউ টাউন নামে পরিচিত নবনির্মিত আবাসিক প্রকল্পের এক নম্বর সেক্টরে এই স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করা হচ্ছে। “আইকনিক সিটি” নামক একটি উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ হিসেবে শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। স্টেডিয়ামটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ স্টেডিয়াম হতে যাচ্ছে। পাঁচতলা বিশিষ্ট প্যাভিলিয়ন থাকবে। স্ট্যান্ড থাকবে তিন স্তর বিশিষ্ট। স্টেডিয়ামটি একসাথে বসে পঞ্চাশ হাজার লোক খেলা উপভোগ করতে পারবে। বর্তমানে মিরপুর স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা ২৫ হাজারের কিছু বেশি। এই স্টেডিয়ামের পূর্ণ গ্যালারি বাংলাদেশের ক্রিকেট উন্মাদনাকে একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবে। শহর থেকে একটু দূরে থাকায় সেখানে ক্রিকেটভক্তরা খুব সহজেই পৌঁছে যেতে পারবে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এই স্টেডিয়ামে আরো পাঁচটি ভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশনকে স্থান দেবার পরিকল্পনা ব্যক্ত করেছে।
Sheikh Hasina International Cricket Stadium এর নির্মাণ ব্যয়
শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম এশিয়ার ইতিহাসের সবচেয়ে দামী ক্রিকেট স্টেডিয়াম হতে যাচ্ছে। এর আনুমানিক ব্যয় ১৩০০ কোটি টাকা (১৪ কোটি মার্কিন ডলার)। ২৮ নভেম্বর,২০১৯ থেকে শুরু হয়ে ২০২৬ সাল নাগাদ এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে। কোভিডসহ নানা কারণে কয়েক দফায় এই স্টেডিয়ামের নির্মাণকাজ পিছিয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের জন্য ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি পৃথক অনুশীলনের স্থান তৈরি করারও পরিকল্পনা রয়েছে বিসিবির। দেশের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়ামের পুরোটাই বহন করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক মানের সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে বিপ্লব ঘটাতে যাচ্ছে বিসিবি।
Sheikh Hasina International Cricket Stadium এর নির্মাণ জটিলতা
২০১৯ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ততকালীন সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ঘোষণা দিলেও কোভিড মহামারিসহ কয়েকটি কারণে গত এরপরের পাঁচ বছরে নির্মাণকাজ শুরু করেনি বিসিবি। সরকারি অর্থায়নে মাত্র ১০ হাজার শতাংশ হিসেবে জমি অধিগ্রহণ করেছিল বিসিবি। নাম মাত্র দামে পাওয়া সেই ৩ হাজার ৭৩৫.৭০ শতাংশ জমির বাজারমূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা (প্রতি শতাংশ ৯৫ লাখ টাকা হিসেব করে)। বিসিবির অর্থ বিভাগের সূত্র মতে, এই এক স্টেডিয়ামে বিসিবির স্থায়ী সম্পদে পুর্নমূল্যায়নের মোট লাভ বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। তাই নির্মাণ শুরু না হলেও বিসিবির ক্ষতি হয়নি। ইতোমধ্যে দুটি টার্ফের রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রকল্প কার্যালয় নির্মাণের উদ্দেশ্যে সেখানে দুই কোটি টাকা খরচ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।
Sheikh Hasina International Cricket Stadium এর নির্মাণ পরিস্থিতি
শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম তুরাগ নদীর পূর্ব পাশে পূর্বাচল এক্সপ্রেস হাইওয়েতে নির্মিত হচ্ছে। এটি ৩৮ হেক্টর জমির উপর দাঁড়িয়ে থাকবে। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনা করা হয়। তখন ধারণা করা হয়েছে ২০২২ সালের ডিসেম্বর নাগাদ এর নির্মাণকাজ শেষ হবে। কিন্তু ২০২৪ সালের মাঝ পর্যন্ত এর নির্মাণকাজে হাত দেয়ার সুযোগ পায়নি বিসিবি। ধারণক্ষমতার হিসেবে এটি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ স্টেডিয়ামের তালিকায় তিন নম্বরে জায়গা করে নেবে। আর নির্মাণব্যয়ের হিসেবে দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ক্রিকেট স্টেডিয়াম হতে যাচ্ছে এটি।
বালু নদের নৌকার আদলে তৈরি হতে যাওয়া এই স্টেডিয়াম প্রকল্পে আন্তর্জাতিক পরামর্শক হিসেবে বিসিবি বেছে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠান পপুলাসকে। তাদের পেছনে বিসিবি পরামর্শক ব্যয় হিসেবে খরচ করবে ৭৬ কোটি টাকা। স্টেডিয়ামের নকশা প্রণয়ন ও প্রকল্প বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক ঠিকাদার নিয়োগপ্রক্রিয়াও চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। সবমিলিয়ে ২০২৫ সালের জুলাই মাস থেকে নির্মাণ কাজে হাত দিতে চায় বিসিবি। ৩৬ থেকে ৪২ মাসের মধ্যে পুরো নির্মাণকাজ সম্পন্ন করতে চায় তারা।
Sheikh Hasina International Cricket Stadium এর নির্মাণ অর্থের যোগান
বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট। আর এইদেশে ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা হলো বিসিবি। ক্রিকেটের জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে বিসিবি বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম ধনী ক্রিকেট বোর্ড। নিজেদের আর্থিক শক্তির উপর ভর করে দেশের ক্রীড়া ইতিহাসের সর্ববৃহৎ প্রকল্প নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে তারা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিসিবির ফিক্সড ডিপোজিটে (এফডিআর) বিনিয়োগ ছিল ৫২২ কোটি টাকার কাছাকাছি। যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৭৭২ কোটি টাকার মতো। দেশের ক্রীড়া ইতিহাসে এত ধনবান ক্রীড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থার দেখা যায়নি কখনো। ২০২৪ সালের মাঝামাঝিতে বিসিবির পূঞ্জীভূত তহবিলের পরিমাণ ১ হাজার ৬৫ কোটি টাকা। তাই এমন আর্থিক শক্তি নিয়ে একটি নতুন স্টেডিয়ামে বিনিয়োগ করাটা বিসিবির পক্ষেই সম্ভব। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ক্রিকেটের অবকাঠামো বদলে দেয়া সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
Sheikh Hasina International Cricket Stadium এর নকশা
শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের নকশা করেছে অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক নির্মাণ প্রতিষ্ঠান পপুলাস। এটি দেখতে বাংলাদেশের বালু নদের নৌকার মতন। খেলার মাঠে মাঠে অস্ট্রেলিয়ার ঘাস ব্যবহার করা হবে।
উপসংহার
বাংলাদেশ ক্রিকেটপাগল জাতি। শত হতাশার মধ্যে থেকেও বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ক্রিকেটে নিজেদের দেশকে সমর্থন দিয়ে যায়। এই উন্মাদনায় শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম এক নতুন মাত্রা যোগ করবে। দেশের ক্রিকেটভক্তরা ক্রিকেটের পূর্ণাংগ স্বাদ লাভ করতে পারবে এখানে। অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার ফলে প্রতিটি ধাপে ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্য কাজ করা হচ্ছে। ঢাকার মূল শহর থেকে একটু বাইরে হওয়ায় নাগরিক কোলাহল থেকে দূরে বসে খেলা দেখার সুযোগ পাবে সাধারণ মানুষ। বারবার নির্মাণ কাজ পিছিয়ে যাওয়ার পর ২০২৫ সালের মাঝামাঝি ক্রিকেট স্টেডিয়ামটি নির্মাণকাজে হাত দেয়ার ইচ্ছে পোষণ করেছে বিসিবি। সঠিকভাবে নির্মাণ করতে পারলে ২০৩০ সাল থেকে এই নান্দনিক স্থাপনাই বাংলাদেশ ক্রিকেটের বিজ্ঞাপন হয়ে দাঁড়াবে।