বর্তমান বিশ্বে পুরুষ ক্রিকেটের পাশাপাশি নারী ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। দশ বছর আগের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি মানুষ নারী ক্রিকেট দেখেন। বর্তমান সময়ে প্রতিযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে নারী ক্রিকেটের প্রতি সাধারণ দর্শকের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক নারী ক্রিকেটার নিজেদের অসামান্য ক্রীড়া নৈপুণ্যের পাশাপাশি সৌন্দর্য্যের জন্য দর্শকপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। ব্যাট-বলের লড়াইয়ের সাথে নিজস্ব গ্ল্যামার নিয়ে হয়ে উঠেছেন অনন্য।
Most Beautiful Women Cricketer এর তালিকা
নারী ক্রিকেটের ইতিহাসে বহু খেলোয়াড় তাঁদের ক্রীড়ানৈপুণ্যের মাধ্যমে ভক্তদেরকে মুগ্ধ করেছেন। এর পাশাপাশি অনেক ক্রিকেটার আছেন যারা বাইশ গজে নিজেদেরকে অনন্য উচ্চতায় নেবার পাশাপাশি গ্যালারিতে ঢেউ তুলেছেন। এইসব ক্রিকেটারদের সৌন্দর্য্যে মশগুল হয়ে খেলার প্রেমে মজেছেন ক্রিকেট ভক্তরা। অস্ট্রেলিয়ার এলিস পেরি, ভারতের মিতালী রাজ, স্মৃতি মন্দনা, ইংল্যান্ডের সারাহ টেইলর তাঁদের রূপে-গুণে ক্রিকেটবিশ্বে স্মরণীয় হয়ে আছেন।
এলিস পেরি
অস্ট্রেলিয়ার অলরাউন্ডার এলিস পেরিকে ক্রিকেটীয় জগতের সকলে এক নামে চেনে। তিনি প্রকৃতপক্ষেই “অলরাউন্ডার” শব্দটার নতুন সংজ্ঞা আবিষ্কার করেছেন যেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় নারী ক্রিকেট দল ও ফুটবল দলের হয়ে অভিষেক ঘটে এলিসের। ক্রীড়া ইতিহাসের একমাত্র নারী হিসেবে ক্রিকেট ও ফুটবল উভয় খেলাতেই বিশ্বকাপে খেলার অনন্য গৌরব অর্জন করেন এলিস। ব্যাটিং আর বোলিং নৈপুণ্যের এই ক্রিকেটার ক্রমাগত নিজেকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন। ডান হাতি পেস বোলিংয়ে বলটাকে ক্রমাগত সুইং করাতে পারেন। পাশাপাশি মিডল অর্ডারে অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম ব্যাটিং স্তম্ভ তিনি। পেরি একাধিক বিশ্বকাপ জয়ের যাত্রায় ছিলেন মূল নায়িকা। বাইশ গজের বাইরেও তিনি যেন রূপালী পর্দার মনমোহিনী সুপারস্টার। স্বর্ণকেশী এই তরুণী তাঁর সৌন্দর্য্য দিয়ে গত দেড় দশক ক্রিকেট বিশ্বকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছেন। খেলাধুলার পাশাপাশি উপস্থাপনাতেও তাঁর সদর্প উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। ক্যামেরার সামনে সহজাত ভংগি ও চমৎকার হাসিতে সবার হৃদয় জয় করেছেন পেরি। তিনি যেন ক্রিকেটের মারিয়া শারাপোভা।
ইশা গুহ
টিভিতে ক্রিকেট দেখার অভ্যেস থাকলে ইশা গুহের ধারাভাষ্য অন্তত একবার হলেও শোনা হয়েছেন আপনার। ইংরেজ এই ধারাভাষ্যকার চমৎকার বাচনভংগি ও দারুণ বিশ্লেষণে ধারাভাষ্যকক্ষ মাতিয়ে রাখেন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই ক্রিকেটার এক দশক ধরে চলা ক্যারিয়ারের ইতি টানেন ২০১২ দালে। ডান হাতি এই ফাস্ট মিডিয়াম বোলারের অভিষেক হয় ২০০২ সালে, মাত্র ১৭ বছর বয়সে। সেই বছরেই তিনি বিবিসির “এশিয়ান নেটওয়ার্ক’স স্পোর্টস পার্সোনালিটি” উপাধিতে ভূষিত হন। ২০০৭-০৮ অ্যাশেজে গুহ তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে স্মরণীয় ম্যাচটি খেলেন। সেইবার বাওরাল স্টেস্টে তাঁর ১০০ রানে ৯ উইকেটের বোলিং নৈপুণ্যের উপর ভর করে ইংরেজরা অ্যাশেজ তাদের দেশেই রেখে দিতে সক্ষম হয়। ২০০৯ সালের নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও নারী বিশ্বকাপজয়ী দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি। ভারতীয় দশর্কদের কাছে জনপ্রিয় “এক্সট্রা ইনিংস” নামক আইপিএল অনুষ্ঠানের নিয়মিত মুখ ছিলেন ইশা।
সারাহ টেইলর
সারাহ অ্যান টেইলর ইংরেজ নারী ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরাদের একজন। কমনীয় মুখের অধিকারিণী এই ক্রিকেটার উইকেটের সামনে ও পেছনে দুই ভূমিকাতেই ভীষণ সপ্রতিভ। গ্লাভস হাতে ক্ষিপ্রতার কারণে তিনি ক্রিকেটমহলে বেশ জনপ্রিয়। তবে সারাহ টেইলরকে অনন্য করে তুলেছে তাঁর স্ট্রোকমেকিং ক্ষমতা। ওয়ানডে ক্রিকেটে ওপেনিংয়ে নেমে নিয়মিত ঝড় তুলতে পারদর্শী সারাহ। তাঁর মারকুটে ব্যাটিংয়ে চড়ে ইংল্যান্ড টিম প্রায়ই ফিল্ডিং বাধ্যবাধকতার পুরো ফায়দা তোলে। ২০০৮ সালে অ্যাশেজজয়ী ইংল্যান্ড দলের গুরুত্ব সদস্য ছিলেন সারাহ। একই বছরে নারী ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসের উদ্বোধনী জুটিতে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহের নতুন রেকর্ড গড়েন সারাহ। লর্ডসে সতীর্থ ক্যারোলিন অ্যাটকিনসের সাথে ২৬৮ রানের জুটি করেন সারাহ। তিনি ওয়ানডেতে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে ১০০০ রানের রেকর্ড গড়েছেন।
মেগ ল্যানিং
সিংগাপুরে জন্ম নেয়া এই নারী ক্রিকেটারের সৌন্দর্যে মুগ্ধ তাবত ক্রিকেট দুনিয়া। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি নেতৃত্বগুণের কারণেও ল্যানিং ক্রিকেট জগতে আলাদা স্থান করে নিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়াকে দীর্ঘ সময় ধরে নেতৃত্ব দিয়েছেন। নিজের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচে এসেই ইংল্যান্ডের ১৪৮ বলে ১০৩ রানের এক অনবদ্য ইনিংস খেলেন তিনি। ২০১২ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম নারী খেলোয়াড় হিসেবে টানা পাঁচ ইনিংসে ৩০+ স্কোর করেন ল্যানিং। সহজাত স্ট্রোক মেকিং ক্ষমতার পাশাপাশি বিপদে দলের হাল ধরতেও দারুণ দক্ষ মেগ ল্যানিং। প্রায়ই অস্ট্রেলিয়াকে টেস্ট ম্যাচে একা বাঁচিয়ে ফেলেন।
ক্যাথরিন হেলেন ব্রান্ট
সৌন্দর্যের দিক থেকে ক্যাথরিন ব্রান্টকে পেছনে ফেলবে এমন খুব কম নারী ক্রিকেটারই রয়েছে। অত্যন্ত আকর্ষণীয় মুখাবয়বের অধিকারী ব্রান্টে ক্রিকেটভক্তরা মুগ্ধ। সৌন্দর্য কয়েকগুণে বেড়ে যায় বাইশ গজে। দীর্ঘদেহী এই পেস বোলার পিচে আতংক ছড়ান। তাঁর লাফিয়ে ওঠা বাউন্সারগুলো যেন একেকটা মৃত্যুফাঁদ। শক্তিশালী বোলিং অ্যাকশন আর গতি তাঁকে ক্রিকেটে আলাদা স্থান এনে দিয়েছে। ২০০৯ সালে টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে ক্যাথরিন ব্রান্ট ম্যাচসেরার পুরষ্কার জয় করেন। চার ওভারের স্পেলে মাত্র ছয় রান খরচ করে তিন উইকেট শিকারে ইংল্যান্ডের ম্যাচজয়ের দ্বারটা উন্মুক্ত করে দেন এই সুন্দরী নারী।
হোলি ফার্লিং
হোলি ফার্লিং তাঁর সৌন্দর্য্যের দ্বারা ক্রিকেটবিশ্বকে মোহিত করে চলেছেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ার সেরা নারী ক্রিকেটারদের একজন। মাত্র ১৪ বছর বয়সে তিনি কুইন্সল্যান্ডের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলেন। প্রথম বিভাগে অভিষেকেই ক্রিকেট বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেন৷ ফার্লিং তাঁর প্রথম তিন বলে তিন উইকেটের হ্যাট্রিকে ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম স্মরণীয় অভিষেক ঘটে তাঁর। এর ফলে কুইন্সল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম নারী ক্রিকেটার হিসেবে “কুইন্সল্যান্ড জুনিয়র ক্রিকেটার অফ দ্য ইয়ার” এর পুরষ্কার জেতেন। সুইং বোলিং ও গতির তারতম্যের কারণে ব্যাটসম্যানদের মনে সংশয় তৈরি করতে জুড়ি নেই তাঁর। ডেথ ওভারেও বিশেষজ্ঞ বোলার হিসেবে অধিনায়কের প্রথম পছন্দ থাকেন হোলি ফার্লিং। নিজের কমনীয় রূপ ও স্টাইলের জন্য ক্রিকেটভক্তদের মধ্যে আলাদা অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন এই পেস বোলার। ২০১৩ সালের নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপে ১০.৫৫ গড়ে নয় উইকেট শিকার করেন ফার্লিং।
রোজালি অ্যান বার্চ
“বিউটি উইথ ব্রেইন” – ইংল্যান্ডের ক্রিকেট খেলোয়াড় রোজালিন অ্যান বার্চের ক্ষেত্রে এই প্রবাদটি পুরোপুরি খাটে। সাসেক্সের এই অল-রাউন্ডার ডান হাতি অফস্পিন বল করেন। পাশাপাশি লোয়ার অর্ডারে উইলো হাতে দ্রুত রান তোলাতেও জুড়ি নেই তাঁর। রূপে-গুণে কোথাও কমতি নেই বার্চের। ইউনিভার্সিটি অফ সাসেক্স থেকে ভাষাবিদ্যার উপর স্নাতক ডিগ্রিও আছে তাঁর। অনেক পুরুষের স্বপ্নের এই নারী খেলার মাঠেও কম যান না। ২০০৫ সালে অ্যাশেজজয়ী নারী দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। এরপর ২০০৮ সালে সেই অ্যাশেজ রক্ষাকারী দলেও বার্চ খেলেছেন। বার্চের নৈপুণ্যে ইংল্যান্ড অ্যাশেজে জয় করে।
স্মৃতি মন্দনা
স্মৃতি মন্দনা ভারতীয় নারী ক্রিকেট দলের নতুন আইকন। বাঁ হাতি এই স্টাইলিশ ব্যাটারের উইলোতে চেপে প্রায়ই ভারত জয়ের বন্দরে ভিড়ে যায়। মুম্বাইয়ের এই তরুণী এর ভারতের পক্ষে ব্যাটিং ইনিংস শুরু করে থাকেন। ১৮ বছর বয়সে অভিষেকের পর থেকে “টিম ইন্ডিয়া” এর ব্যাটিং অর্ডারের উপরের জায়গা তাঁর জন্যই বরাদ্দ। মন্দনার মতন এমন ধারাবাহিক ব্যাটার নারী ক্রিকেট ইতিহাসেই খুব কম এসেছে। এই বাঁহাতি ব্যাটারের উত্থানের গল্পটাও বিস্ময়কর। মাত্র নয় বছর বয়সে মন্দনা মহারাষ্ট্রের অনূর্ধ্ব-১৫ দলে ডাক পান। এরপর এগারো বছর বয়সে রাজ্যাদলের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৮ ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেন। তিনি যে ভবিষত্যের সুপারস্টার হতে যাচ্ছেন, এটা সেই ছোটবেলাতেই বোঝা গিয়েছিল। নিজের অসামান্য ব্যাটিংশৈলীর পাশাপাশি সৌন্দর্য্যের জন্যও ভক্তমহলে দারুণ কদর মন্দনার। ভুবনভোলানো হাসির মালিক এই ক্রিকেটারকে বলিউডি সিনেমার নায়িকার ভূমিকাতেও দারুণ মানিয়ে যেত। ভারতের কোটি হৃদয় তোলপাড় করা ২৭ এর তরুণী ক্রিকেট ক্যারিয়ারকে আরো দীর্ঘায়িত করবেন বলেই ভক্তকুলের বিশ্বাস।
মিতালী রাজ
ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটারের তালিকা করলে মিতালী রাজ উপরের দিকেই থাকবেন। এই গুজরাটি ব্যাটার নিজের উইলোখণ্ডের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের জন্য মূর্তিমান আতংক হয়েছেন। ক্রিকেটে মিতালীকে ব্যাট করতে দেখা একটা স্বর্গীয় অভিজ্ঞতা। ডানহাঁতি এই ব্যাটার নিজেকে নারী ক্রিকেটে শচীন টেন্ডুলকারের অবস্থানে নিয়ে গেছেন। নারী ওয়ানডে ক্রিকেটে তাঁর চেয়ে বেশি রান করতে পারেনি আর কেউই। তিনিই একমাত্র নারী ক্রিকেটার যার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৭,০০০০ এর উপরে রান আছে। একমাত্র নারী ক্রিকেটার হিসেবে টানা সাত ম্যাচে অর্ধশতক করার বিরল রেকর্ড আছে মিতালীর। ভারতের সাবেক অধিনায়ক তাঁর মোহনীয় কাভার ড্রাইভে ভারত সমর্থকদের বুঁদ করেছে। ১৯৯৯ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে “টিম ইন্ডিয়া” এর হয়ে অভিষেক ঘটে মিতালী রাজের। এরপর দুই দশক ধরে ভারতীয় ক্রিকেট টিমের ব্যাটিং দক্ষ হাতে সামলে গেছেন মিতালী। উইলো হাতে যেমন সৌরভ ছড়িয়েছেন, তেমনি তাঁর রূপে মজেছেন কোটি ক্রিকেটভক্ত। সুন্দরী এই ক্রিকেটারকে আদর্শ মেনে বেড়ে উঠেছে একটি গোটা ক্রিকেট প্রজন্ম। তাঁর সময়ে ভারতের নারী ক্রিকেট দল এশিয়ার গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে। মিতালী রাজের অবস্থান ভারতের ক্রিকেটে তাই দেবীতুল্য।
জাহানারা আলম
জাহানারা আলম বাংলাদেশী ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয় স্থান করে নিয়েছেন। দীর্ঘদেহী এই ফাস্ট বোলার তাঁর দ্রুতগতির বলের জন্য বিখ্যাত। পাওয়ারপ্লেতে নিয়মিতই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে ব্রেকথ্রু এনে দেন জাহানারা। ক্রিকেট মাঠে ব্যাটসম্যানদেরকে নাস্তানাবুদ করার পাশাপাশি নিজের রূপে ক্রিকেটভক্তদের হৃদয় জয় করেছেন জাহানারা। ১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাসের এক তারিখে বাংলাদেশের খুলনায় জন্মগ্রহণ করেন জাহানারা। তিনি ডানহাতি ফাস্ট বল করেন এবং ব্যাটিংও করেন ডানহাঁতি হিসেবে। ২০১০ সালে গুয়াংজুতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন জাহানারা। সেই প্রতিযোগিতায় রৌপ্যপদক লাভ করে বাংলাদেশ। এটি ছিল তাদের ইতিহাসের প্রথম রৌপ্যপদক। জাহানারা আলমের পেস বোলিংয়ের বড় অবদান ছিল এর পেছনে। নিজের ক্রিকেটীয় দক্ষতার পাশাপাশি সৌন্দর্য্যের কারণেও আলোচনার কেন্দ্রে থাকেন এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার।
লরা মার্শ
লরা মার্শ ইংল্যান্ডের জাতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম সেরা এক আবিষ্কার। শুরুতে মিডিয়াম পেস বোলিং করে নিয়মিত উইকেট পাওয়ার পরেও মার্শ নিজেকে নির্দিষ্ট গণ্ডিতে আটকে রাখেনি। একসময়ে অফস্পিন বোলিং করা শুরু করেন তিনি। মার্শের স্পিন বোলিং যে কোনো ফর্মেটে তাঁর অধিনায়কের জন্য এক বড় অস্ত্র। তিনি খুব শীঘ্রই নির্বাচকদের নজর কাড়তে সক্ষম হন। ২০০৬ সালে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় লরা মার্শের। ২০০৮ সালের অ্যাশেজ দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন মার্শ, পরের বছর অ্যাশেজ ধরে রাখা দলেও তিনি অগ্রগামী ভূমিকা পালন করে। তিনি ঘরোয়া ক্রিকেটে সাসেক্সের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন। ক্রিকেটের পাশাপাশি লরা মার্শ চাইলে হয়তো মডেলিংয়েও নামতে পারতেন। সৌন্দর্য্যের মাধ্যমে হাজারো ইংরেজ তরুণের হার্টথ্রব এই ক্রিকেটার।
ড্যানিয়েল ওয়াট
টুইটারে বিরাট কোহলিকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে ক্রিকেটমহলে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন ড্যানিয়েল নিকোল ওয়াট। ইংরেজ এই ক্রিকেটার নিজেও ভক্তদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দ্রুতে রয়েছেন। স্টোকে জন্ম নেয়া এই অলরাউন্ডার ব্যাট-বল দুই ভূমিকাতেই অধিনায়কের বিরাট ভরসার জায়গা। মাত্র ১৯ বছর বয়সে অভিষেকের পর থেকেই ইংল্যান্ডের নারী জাতীয় দলের একজন স্থায়ী সদস্য এই ক্রিকেটার। ব্যাটিং দারুণ করেন, ওয়ানডে ক্রিকেটে দুটো সেঞ্চুরি রয়েছে। পাশাপাশি অফব্রেক বোলিংয়ের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে ব্রেকথ্রু এনে দেয়ার অভ্যেসও আছে। এক সময়ে বোলিং বেশি করতেন, আস্তে আস্তে ব্যাটিংয়ের দিকে অধিকতর মনোযোগ দিয়েছেন এই ক্রিকেটার। এই স্বর্ণকেশীর হাসিতে অনেক ক্রিকেটভক্তের হৃদয় আটকে গেছে।
কাইনাত ইমতিয়াজ
পাকিস্তানের ক্রিকেটার কাইনাত ইমতিয়াজ তাঁর সৌন্দয্যের জন্য ক্রিকেটবিশ্বে বিশেষ পরিচিতি পেয়েছেন। ১৯৯২ সালের ২১শে জুনে জন্মগ্রহণ করা কাইনাতের পরিবার ক্রিকেটের সাথে সম্পৃক্ত। তাঁর মা সালিমা ইমতিয়াজ একজন আম্পায়ার। ২০১১ সালে ১৯ বছর বয়সে পাকিস্তানের জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে পা রাখেন কাইনাত। দারুণ অলরাউন্ডিং দক্ষতার জন্য ক্যারিয়ারের শুরুতে বেশ আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলেন কাইনাত। তিনি ডানহাতি হিসেবে ব্যাট করেন এবং ডান হাতি মিডিয়াম-ফাস্ট বল করেন। পাকিস্তানের জাতীয় দলের হয়ে তিনি গুয়াংজু ও ইনচিয়ন এই এশিয়ান গেমসেই স্বর্ণপদক লাভ করেন। কাইনাত ইমতিয়াজের ক্রীড়ানৈপুণ্যের পাশাপাশি তাঁর সহজাত রূপ তাঁকে ভক্তদের কাছে প্রিয় করে তুলেছে। ২০২২ সালের ৩০শে মার্চ ইমতিয়াজ পাকিস্তানের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ওয়াকার উদ্দিনের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
সানা মীর
সানা মীর পাকিস্তানের নারী ক্রিকেট দলের ইতিহাসের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়। খাইবার পাখতুনখাওয়াতে জন্ম নেয়া এই ক্রিকেটারের নেতৃত্বে পাকিস্তান ক্রিকেট টিম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে হামাগুড়ি দেয়া থেকে শক্ত পায়ে দাঁড়াতে শিখেছে। তিনি পাকিস্তানের হয়ে ২২৬টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এর মধ্যে ১৩৭টি ম্যাচে তিনি অধিনায়ক হিসেবে দলকে সামনে থেকে চালিয়ে নিয়ে গেছেন। তিনি পাকিস্তানের নারী ক্রিকেট দলের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম ১০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন। তিনি ওয়ানডে ম্যাচে ব্যাট হাতে তিনবার পঞ্চাশ রান পার করেছেন। ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে তিনি পাকিস্তানের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডে বোলিং র্যাংকিংয়ে শীর্ষস্থান অর্জন করেছেন। ক্যারিয়ারের একটি বড় সময়জুড়ে তিনি ওয়ানডে ক্রিকেটের শীর্ষ দশ স্থানের মধ্যে অবস্থান করেছেন। সানা মীর পদ ছেড়ে দেয়ার পর পাকিস্তানের অধিনায়কের দায়িত্ব গ্রহণ করেন বিসমাহ মারুফ। সানা মীর তাঁর নিটোল রূপের জন্যও ভক্তদের হৃদয়ে আলাদা জায়গা করে নিয়েছেন।
অ্যামেলিয়া কার
অ্যামেলিয়া কার নিউজিল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তাঁর অলরাউন্ড নৈপুণ্যের জন্য তিনি বেশ পরিচিতি লাভ করেছেন। বলে উইকেট নেবার পাশাপাশি ব্যাট হাতে প্রতিপক্ষ আক্রমণকে ধ্বসিয়ে দিতে পারেন। ২০১৮ সালের জুন মাসে অ্যামেলিয়া কার ক্রিকেট বিশ্বে হইচই ফেলে দেন। তিনি মাত্র ১৭ বছর বয়সে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২৩২ রানের অপরাজিত একটি ইনিংস খেলেন, এটি নারী ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন। ক্রিকেট মাঠের পাশাপাশি গ্ল্যামারের জন্যও অ্যামেলিয়া কার পরিচিত। সৌন্দয্যের জন্য কার সোশ্যাল মিডিয়া অন্যতম জনপ্রিয় ক্রিকেটার।
মারিজেন কাপ
দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার মারিজান কাপ তাঁর দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ক্রিকেটার। তিনি জাতীয় দলের মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করেন। তিনি প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে হ্যাট্ট্রিক করার গৌরব লাভ করেন। মারিজান কাপ ডানহাতি ব্যাটিং করার পাশাপাশি ডানহাতি মিডিয়াম পেস বল করেন। তাঁর ওয়ানডে ক্রিকেটে একটি শতক রয়েছে। জাতীয় দলের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের ফ্র্যাঞ্জাইজি ক্রিকেটেও এক পরিচিত মুখ মারিজেন কাপ। নারী আইপিলে তিনি দিল্লী ক্যাপিটালসের হয়ে খেলে থাকেন। এছাড়া বিগ ব্যাশ ও ক্যারিবীয় প্রিমিয়ার লীগেও নিজের ক্রিকেটের নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন। মারিজেন কাপ তাঁর ক্রিকেট দক্ষতা বাদে সৌন্দয্যের জন্য বিখ্যাত। তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া ফলোয়ারের সংখ্যা দেখলেই জনপ্রিয়তা ঠাওর করা যায়।
উপসংহার
ক্রিকেটে বর্তমানে ক্রীড়া ইতিহাসের অনন্য খেলা, যার জনপ্রিয়তা অল্প সময়েই বেড়ে চলছে। পুরুষ ক্রিকেটের পাশাপাশি নারী ক্রিকেটের প্রতিও সাধারণ দর্শকের আগ্রহ বেড়ে গেছে। বর্তমানে টিভি খুললেই নারী ক্রিকেটের সম্প্রচার দেখা যায় যা ১৫ বছর আগেও অকল্পনীয় ছিল। খেলোয়াড়দের দক্ষতা বাড়ার পাশাপাশি বিজ্ঞাপনী সংস্থার আগ্রহ বাড়ার কারণে খেলায় অর্থের পরিমাণও বেড়েছে। এতে আগের চেয়ে অনেক বেশি নারী ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এলিস পেরি, স্মৃতি মন্দনা কিংবা মিতালী রাজরা শুধু নিজেদের দেশের ক্রিকেটের গর্ব নন, বরং পুরো ক্রিকেটের গর্বই বলা যায় তাঁদেরকে। বাইশ গজে অবিশ্বাস্য পারফর্মেন্সের পাশাপাশি ভক্তদের হৃদয়ে আলোড়ন ফেলেছেন নিজেদের সৌন্দর্য দিয়ে, যেটি আকর্ষণের কারণ।